যদি জিজ্ঞেস করা হয় বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি, নিশ্চিতভাবেই প্রত্যেকের উত্তর ভিন্ন হবে। কিন্তু তরুণরা কি ভাবছে দেশ নিয়ে আর তাদের কাছে কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে? এসব ভাবনা জানতে বিওয়াইএলসি আয়োজন করেছিল ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে। সেখানে তরুণদের কাছ থেকে যে উত্তরগুলো পাওয়া গিয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাদের মতে বাংলাদেশের সামনে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেকারত্ব সমস্যা। তথ্য ও পরিসংখ্যান একই কথা বলছে, অর্থাৎ বাংলাদেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের উপযুক্ত কাজ পাচ্ছে না। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী হচ্ছে তরুণ। আর তাদের একটা বড় অংশই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। আর এ ব্যাপারে ভয়াবহ তথ্যটি হচ্ছে, শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩০%। অর্থাৎ উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করার পরেও মিলছে না কাজের সুযোগ বরং তাদের মাঝেই বেকারত্বের হার বেশি। এর পিছনের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র ফলাফল কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা। আর যে কারনে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত অসংখ্য শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকে না। একই সাথে অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে আসলেও তার প্রয়োগ সম্পর্কে যথাযত জ্ঞানের অভাব রয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে একাডেমিক পড়াশোনার খুব বেশি দরকার না হলেও নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন হয়। আর এক্ষেত্রেই বেশিরভাগ তরুণ পিছিয়ে পড়ে। দেখা গেল কারো একডামিক ফলাফল অনেক ভালো কিন্তু যে ন্যূনতম দক্ষতার প্রয়োজন তা তাদের নেই। এসব ব্যাপারে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মন্তব্য হলো, তাদের অনেক দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী তারা দক্ষ লোকবল পাচ্ছেন না। অর্থাৎ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে একটা ‘গ্যাপ’ থেকে যায়। তবে এর পরেও চাকরির নতুন ক্ষেত্র যে খুব বেশি তা নয়। যে পরিমাণ তরুণ প্রতি বছর গ্রাজুয়েশন করে বের হচ্ছে সে পরিমাণ কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। সাউথ এশিয়ান নেটয়ার্ক ফর ইকোনোমিক মডেলিং এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান এখন যথেষ্ট ভালো হলেও, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি।
এ সমস্যা থেকে উত্তোরনের ব্যাপারে তরুণদের মধ্যে বেশ কিছু মতামত রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মনে করে তাদের আসলে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কিছু করার নেই। কেননা, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কারিকুলাম আছে তা বেশ পুরাতন আর যুগোপোগী নয়। আর সে কারিকুলামের বাইরে কিছু করার চেষ্টা অনেক শিক্ষার্থীর মাঝেই থাকে না। কিন্তু একডেমিক পড়াশোনা শেষ করার পর তারা বুঝতে পারে শুধু গতানুগতিক নিয়মে শিক্ষাজীবন শেষ করে আসলে কর্মজীবনে ভালো করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে মোলিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার সুযোগ খুব ই কম। আবার চাকরি ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়ের চেয়ে ব্যবহারিক বা কর্মমুখী শিক্ষা বেশি প্রয়োজনীয়। এই উভয়মুখী সমস্যার কারনে বেকারত্বের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ সমস্যা থেকে উত্তোরনের উপায় কি?
বেকারত্বের এই সমস্যা থেকে উত্তোরনের জন্য বেশ কিছু নেয়া পদক্ষেপ জরুরি যার অন্যতম হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষার উন্নতি করা। একই সাথে তরুণদের জন্য এমন কিছু কিছু দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাতে করে তারা নতুন কাজগুলোর জন্য উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারে। চাকরিদাতা ও চাকরি প্রত্যাশীদের মাঝের এই গ্যাপ দূর করার জন্য বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ করছে। যেখানে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন মাধ্যম ও বয়সের তরুণদের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে থাকে বিভিন্ন সেশন যেখানে তরুণদের ‘সফট স্কিলস’ বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয়। এরকম আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তরুণদের জন্য কাজ করছে কিন্তু তা সবার জন্য যথেষ্ট নয়। আরও বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তরুণরা সরকারের পক্ষ থেকেও বেশি কিছু পদক্ষেপ আশা করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আরও বেশি সরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি তাদের প্রত্যাশা হলো শিক্ষাব্যবস্থার বা কারিকুলামের উন্নতি সাধন করা।
তরুণদের এ সকল প্রত্যাশা ও বক্তব্যগুলো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে ২৭, ২৮, ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিওয়াইএলসির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট। যেখানে তরুণদের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের প্রত্যাশা ও মতামত অনুযায়ী তৈরি হবে ‘ইয়ুথ ম্যনিফেস্টো’।
Leave a Reply