চাকুরি কিংবা ইন্টার্নশিপ সব জায়গাতেই সর্বপ্রথম যা আপনাকে উপস্থাপন করবে তা হলো আপনার রেজিউমি। এই একটি জিনিসই ঠিক করবে আপনি চাকুরিদাতার সামনে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন কি পাবেন না। তাই রেজিউমিটি পরিপাটি হওয়া অতি আবশ্যক।
রেজিউমি লেখার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুব জরুরি । আসুন একনজরে সেগুলি দেখে নেওয়া যাক।
১. রেজিউমির দৈর্ঘ্য
বলা হয়ে থাকে , ১০ বছর = ১ পৃষ্ঠা। এর মানে হচ্ছে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা রেজিউমি লিখবেন এক পৃষ্ঠায়। এরচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা থাকলে রেজিউমি লিখুন দুই পৃষ্ঠায়। তবে রেজিউমির দৈর্ঘ্য কখনোই দুই পৃষ্ঠার বেশি হবেনা।
২. ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ
আবেদন করছেন শিক্ষক পদে অথচ আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে লেখা আপনি ব্যবসায়িক উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী! কেমন হলো ব্যাপারটা? প্রায়ই দেখা যায় একই রেজিউমি চালিয়ে দেওয়া হয় বহু জায়গায়। এটা বোঝা খুব জরুরি যে আপনার একই উদ্দেশ্য সব কাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। কাজের ধরণ বুঝে অবজেক্টিভ লিখুন।
আবার অনেকে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে অনেকে প্রতিষ্ঠানের গুণগান করেন, অনেকে আবার লিখেন যে চাকরি পেলে কৃতার্থ হবেন। এগুলো মারাত্মক ভুল। বরং তুলে ধরুন আবেদনকৃত পদের সাথে আপনার আগ্রহের মিল। আপনার মধ্যকার সম্ভাবনাগুলো ফুটিয়ে তুলুন।
৩.অভিজ্ঞতা নির্বাচনে মনোযোগী হোন
রেজিউমিতে কোন অভিজ্ঞতার কথা লিখবেন সেটি নির্ভর করছে আপনি যে কাজের জন্য রেজিউমি লিখছেন এবং আপনার অভিজ্ঞতার ধরণের উপর। সব ধরণের কাজের জন্য সব অভিজ্ঞতা প্রয়োজনীয় নয়। যেমনঃ আপনি আবেদন করছেন এনজিও তে সুপারভাইজর পদে, এক্ষেত্রে আপনার কোনো মার্কেটিং অভিজ্ঞতা না দিয়ে বরং মনিটরিং বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা রেজিউমিতে উল্লেখ করতে পারেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞতা হতে হবে প্রাসঙ্গিক। তবে যদি নিতান্তই কোনো প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা না থাকে তবে যা আছে তাই লিখুন।
৪. অভিজ্ঞতা লেখার নিয়ম
অভিজ্ঞতাগুলো লেখার সময় একটা ব্যাপার মাথায় রাখা খুব জরুরি। আপনি যে কাজ করলেন এবং এর থেকে আপনার যা অর্জন তা অল্পকথায় তুলে ধরুন। যেমনঃ লিখতে পারেন অমুক প্রজেক্টে এই কাজ করে এই ফলাফল এসেছে। এতে খুব সুন্দরভাবেই আপনার দক্ষতা ফুটে উঠে।
৫. শিক্ষাগত যোগ্যতা
এই জায়গাটিতে লিখবেন আপনার সাম্প্রতিক দুটি শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা। যেমনঃ আপনি মাস্টার্স ইতিমধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছেন তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতায় মাস্টার্স এবং অনার্স ব্যাকগ্রাউন্ড উল্লেখ করলেই যথেষ্ট যদি না বিজ্ঞপ্তিতে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া হয়ে থাকে। আর একটা ব্যাপার। অবশ্যই সময়কাল উল্লেখ করবেন।
৬. ফ্রেশার এবং পড়ুয়াদের অভিজ্ঞতা
ফ্রেশার এবং পড়ুয়ারা প্রায়ই বলেন যে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কি লিখবো ? একটু ভাবুনতো। আপনি নিশ্চয়ই টার্ম পেপার তৈরি করেছেন, গ্রুপ ওয়ার্ক করেছেন। সেটা কি আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায় নি? টিমে কাজ করা শেখায় নি? সেটাই সুন্দর করে তুলে ধরুন। আবার অনেকে বিভিন্ন ক্লাবে কাজ করেন , স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত থাকেন । সেগুলো লিখুন। রিসার্চ, ইন্টার্নশিপ কিংবা ফিল্ড ভিজিটের অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখুন।
৭. রেজিউমি হওয়া চাই মেদমুক্ত
আপনার ওজন উচ্চতা কত? এসব তথ্য কি চাকুরিদাতার আদৌ দরকার আছে? না নেই। চাকুরিদাতা জানতে চায় আপনার সম্পর্কে। আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা আর আগ্রহ সম্পর্কে। তাই ছোট্ট এই জায়গাটিতে যতদূর সম্ভব নিজেকে ফুটিয়ে তুলুন। রেজিউমি থেকে বাদ দিন অপ্রয়োজনীয় তথ্য।শুধুমাত্র যে তথ্যগুলো জানতে চাওয়া হয়েছে সেগুলোই উল্লেখ করুন।
৮. ব্যক্তিগত তথ্য
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফোন নম্বরের আগে আমরা কান্ট্রি কোড লিখিনা। দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই রেজিউমি পাঠান না কেনো এই কাজটি কখনোই করবেন না। লিঙ্কড ইন থাকলে তা অবশ্যই উল্লেখ করুন। আর লিঙ্কড ইন না থাকলে আজই তৈরি করে ফেলুন। বিদেশে রেজিউমি পাঠালে স্কাইপে আইডি লিখতে ভুলবেন না।
৯. সময়কাল
শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতা সব জায়গায় সাল তারিখসহ সময়কাল উল্লেখ করুন।
১০. রেফারেন্স
রেফারেন্স হিসেবে কখনোই নিজের কোনো আত্মীয়স্বজনের নাম লিখবেন না। আপনার পূর্ববর্তী কাজের সুপারভাইজর কিংবা শিক্ষকের রেফারেন্স ব্যবহার করতে পারেন। যার রেফারেন্স দিচ্ছেন তাকে অবশ্যই জানান।
১১. ভাষাগত দক্ষতা
যে ভাষায় যতটুকু দক্ষতা ঠিক ততটুকুই লিখুন। বাড়িয়ে লিখে কর্তৃপক্ষের মাঝে প্রত্যাশা সৃষ্টি করবেন না। ভাষাগত দক্ষতার সঠিক টার্মগুলো না জানলে গুগল করুন। খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। তবে নিজের ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতে ভালো দখল থাকাটা এই প্রতিযোগিতার যুগে অনেকটা অত্যাবশ্যকীয় বলা যায়।
১২. শখ বা আগ্রহ
আপনার আগ্রহ যদি হয় গালগল্প করা কিংবা ঘুমানো তবে তা রেজিউমিতে উল্লেখ না করাই ভালো। তবে যদি কোনো বিশেষ শখ বা আগ্রহ থাকে যা গঠনমূলক তা উল্লেখ করতে পারেন।যেমনঃ খেলাধুলায় কোনো বিশেষ স্বীকৃতি, বিশেষ কোনো বাদ্যযন্ত্রে দক্ষতা ইত্যাদি।
সবশেষে অবশ্যই বানান ভুল আছে কিনা যাচাই করুন। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন। রেজিউমি হলো চাকুরিদাতার কাছে আপনার প্রতিচ্ছবি, সেটাকে অর্থবহ ও পরিপাটি করুন। আজকাল অনেক প্রফেশনালের কাছ থেকে পয়সা খরচ করে রেজিউমি বানিয়ে নিতে পারেন। তবে নিজের রেজিউমি নিজে তৈরি করাটা সবচেয়ে ভালো। কারণ আপনার সম্পর্কে আপনার চেয়ে ভালো আর কে বলতে পারবে?
Thanks a lot for your nice write-up.
I have 2 questions:
1) Do I need to attach my photograph in a resume?
2) If I do not mention career objective in resume then is it gonna be a problem? Because So far I know, career objective is to be mentioned in CV.
I am looking forward to your answer.